হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে রোগী

অনলাইন ডেস্ক :

কুমিল্লায় ব্যাপকভাবে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু। জেলায় করোনা চিকিৎসার নির্ভরতার জায়গা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) ও সদরের জেনারেল হাসপাতালে কোনও সিট খালি নেই। খালি নেই আইসিইউ শয্যাও। রোগীরা মেঝেতেই অবস্থান নিয়েছেন। কেউ সুস্থ হলে কিংবা কারও মৃত্যুর পর শয্যা খালি হওয়ার অপেক্ষা করছেন রোগী ও স্বজনরা। এমন অবস্থায় অনেকে অ্যাম্বুলেন্সেই রোগী রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এদিকে, বিপুল পরিমাণ রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গ্রাম থেকে শ্বাসকষ্ট ও করোনার উপসর্গ নিয়ে নগরমুখী এই রোগীদের নিয়ে সংকটে পড়ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুলেন্স, অটোরিকশা, রোগীর স্বজন ও স্বেচ্ছাসেবকদের ভিড়। সাইরেন বাজিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স এসে থামছে। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে শুধু শ্বাসকষ্টের রোগী। স্বজনরা বের হয়ে ট্রলি খুঁজছেন। রোগী নামিয়ে ভর্তির অপেক্ষা করছেন অনেকে। সিট না পেয়ে অনেকেই তড়িঘড়ি ফিরছিলেন অন্য হাসপাতালে। আবার অনেকে একাধিক হাসপাতাল ঘুরে অসহায় হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে রেখে রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন। পাশাপাশি ছিল, করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীর মৃত্যুর পর স্বজনদের আহাজারি।

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সিট পাওয়ার লড়াই নতুন কিছু নয়। তবে করোনাকালে সেটি আরও কঠিন হচ্ছে প্রতিদিন। রাত-দিন জেলার ১৭ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসছেন করোনা রোগী। তাদের অবস্থা আগে থেকেই জটিল। ভর্তি করে চিকিৎসা প্রয়োজন। কারও আবার আইসিইউ শয্যা লাগছে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও অনেকের ভাগ্যে আইসিইউ শয্যা জুটছে না।

এসব রোগীর একাধিক স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা বাইরে থেকে এসেছেন। গ্রাম থেকে আসা রোগীরা অন্তত ১০ দিন আগে থেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভুগছেন। তাদের অনেকেই সর্দি-কাশি ভেবে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, অক্সিজেন লেভেল বিপৎসীমায় নেমে আসায় তারা স্থানীয় হাসপাতাল ঘুরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন। যত সময় পার হয়েছে তত রোগীর অবস্থা জটিল হয়েছে।

লাকসামের বাসিন্দা শাহ মো. বেলাল হোসেন (৫২)। করোনা আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় স্বজনরা তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যান সদর জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে শয্যা সংকট থাকায় তাকে আনা হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এখানে আসার প্রায় একঘণ্টা সময় অপেক্ষা করে স্বজনরা কোনও শয্যার ব্যবস্থা করতে পারেননি। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন স্বজনরা।

শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা থেকে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন তার সন্তান। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮০। দ্রুত তাকে অক্সিজেন দিতে হবে, কিন্তু শয্যা খালি নেই হাসপাতালে।

শয্যা সংকটের বিষয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. মহিউদ্দিন জানান, দৈনিক রোগীর চাপ বাড়ছে। শয্যা না পেয়ে স্বজনরা রোগী নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাধ্যমতো সেবা দিতে চেষ্টা করছে, কিন্তু রোগী বেড়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এখন যেসব রোগী আসছেন, তারা প্রথমে জ্বর-সর্দি হলে কেউ টেস্ট করাননি। পরে যখন শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় তখন হাসপাতালে আসেন। আগে থেকে করোনার চিকিৎসা শুরু করলে রোগীর সংখ্যা এত হতো না। এ ছাড়া অসচেতনতার কারণে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগেরও। শয্যা বাড়ানো ও অক্সিজেন সংকট যেন না হয় সেদিকেই বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন। তিনি বলেন, ‘শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। কুমিল্লায় চলতি মাসেই করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১২ হাজার জন। এ সময় মারা গেছেন ২১০ জন।’

বাংলা ট্রিবিউন

     আরো পড়ুন....

পুরাতন খবরঃ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
error: ধন্যবাদ!